আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি
১৯৬৬ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত ২২০০ ক (২১) মোতাবেক স্বাক্ষরদান, অনুসমর্থন ও যোগদানের জন্য গৃহীত ও উম্মুক্ত৷
চুক্তির ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৯৭৬ সালের ২৩ শে মার্চ থেকে কার্যকর৷
ভূমিকা:
এই চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ যেহেতু স্বীকার করে যে, জাতিসংঘের সনদে ঘোষিত নীতি মোতাবেক পৃথিবীতে স্বাধীনতা, ন্যায়পরতা এবং শান্তির ভিত্তি হচ্ছে সকল মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা ও অবিচ্ছেদ্য সমঅধিকারের স্বীকৃতি, যেহেতু স্বীকৃত যে, মানব হৃদয়ের স্বাভাবিক মহত্ত্ব থেকে এই সকল অধিকারের উত্পত্তি ঘটেছে,
যেহেতু স্বীকার করে যে,
মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ সত্যিকারভাবে অভাব এবং ভয়-ভীতি থেকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে, যদি সে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকারসমূহ উপভোগ করতে পারে,
যেহেতু মনে করে যে,
জাতিসংঘের আওতাধীন রাষ্ট্রসমূহের দায়িত্ব রয়েছে মানবাধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহ প্রতিষ্ঠা এবং উহার প্রতি সার্বজনীন সম্মান প্রদর্শন,
যেহেতু মনে করে যে,
প্রতিটি ব্যক্তির কর্তব্য রয়েছে অন্যের প্রতি এবং নিজ সমাজের প্রতি আলোচ্য চুক্তিতে বর্ণিত অধিকারসমূহের প্রতিষ্ঠা এবং সংরক্ষণের জন্য, সেহেতু, অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ একমত হয়ে নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহ (আলোচ্য চুক্তিতে) সম্বিবেশিত করছে :
প্রথম পরিচ্ছেদ
অনুচ্ছেদ-১
১. আত্ননিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে সকল জাতিসমূহের৷ এ অধিকার বলে তারা স্বাধীনভাবে ঠিক করবে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মুক্তভাবে চালিয়ে যাবে তাদের স্বকীয় অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ন৷
২. সকল জাতিসমূহই তাদের স্ব-স্ব প্রয়োজনে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ববহার করতে পারবে৷ পারস্পরিক স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত কোন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েও তাদেরকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷ কোন কারণেই কোন জাতিকে তার নিজস্বভাবে বাঁচার এই উপায় উদ্ভাবন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷
৩. চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ অছি রাষ্ট্রসহ আত্ননিয়ন্ত্রণের এই অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাবে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা অনুযায়ী এই অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে৷
২য় পরিচ্ছেদ
অনুচ্ছেদ-২
১. জাতি, বর্ন, ভাষা, রাজনৈতিক ও অন্যান্য মতাদর্শ, ধনী, গরীব ও জb¥সূত্র নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির অধিকারসমূহ যা আলোচ্য চুক্তিতে বর্ণিত হয়েছে তার প্রতি অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাষ্ট্র প্রদর্শন এবং নিশ্চিত করবে৷
২. প্রতিটি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র যারা এখনও তাদের দেশে আইনগত এবং অন্যান্য পদক্ষেপ দ্বারা উক্ত অধিকারসমূহ প্রদান করেনি তারা আলোচ্য চুক্তির গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং শর্তানুযায়ী সেই সব আইনগত ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে উক্ত অধিকারসমূহ কার্যকর হয়৷
৩. আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে,
(ক) যদি কোন ব্যক্তির চুক্তিতে বর্ণিত অধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহ লংঘিত হয় তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লংঘন সরকারি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দ্বারাও সংগঠিত হয়;
(খ) যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের প্রতিকারে দাবি করে তবে তার উক্ত দাবির যথার্থতা প্রশাসনিক বিচার বিভাগীয় বা অন্য কোন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরূপিত হবে এবং তার বিচার বিভাগীয় প্রতিকার পাবার সম্ভাবনা নিশ্চত করতে হবে;
(গ) প্রতিকারের ব্যবস্থা অনুমোদিত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ উহা কার্যকর করে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে৷
অনুচ্ছেদ - ৩
চুক্তিতে বর্ণিত নাগরিক ও রাজনৈতিক সকল অধিকারসমূহ উপভোগ নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ নিশ্চয়তা বিধান করবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪
১. জরুরী অবস্থার সময়ে যখন জাতির জীবন হুমকির সম্মুখীন হয় এবং উহা যখন জাতির অস্তিত্বের জন্য সরকারিভাবে জারি করা হয় তখন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ চুক্তির পরিপন্থি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তবে উক্ত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক হতে পারবে না এবং জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম অথবা জণ্মসূত্রের পার্থক্য করে উহা প্রয়োগ করা যাবে না৷
২. এই শর্তে মোতাবেক ধারা ৬, ৭, ৮ (অনুচ্ছেদ ১ এবং ২) ১১, ১৫, ১৬ এবং ১৮ এর ক্ষতিকারক কিছু তৈরি করা যাবে না৷
৩. আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী কোন রাষ্ট্র যদি উপরোক্ত ধারার ক্ষতিকারক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে তা শীঘ্র জাতিসংঘের মহাসচিবের মাধ্যমে চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহকে অবহিত করতে হবে, উহা গ্রহণের কারণসমূহ জানাতে হবে, উক্ত ক্ষতিকর পদক্ষেপ তুলে নেয়ার তারিখও মহাসচিবের মাধ্যমে সকল রাষ্ট্রসমূহকে আবার জানিয়ে দিতে হবে৷
অনুচ্ছেদ - ৫
১. আলোচ্য চুক্তির কিছুই এমনভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না যার ফলে কোন রাষ্ট্র, দল অথবা ব্যক্তি তাদের কোন কাজ দ্বারা এই চুক্তির কোন অধিকার বিনষ্ট করে৷
২. কোন দেশের আইন, প্রথা বা রীতি-নীতির কোন অধিকার, যে কোন মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি বাধা বা অপবাদ বলে বলবত্ থাকে, তবে তা আলোচ্য চুক্তিতে গ্রহণীয় হবে না৷
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
অনুচ্ছেদ - ৬
১. প্রতিটি ব্যক্তিরই বাঁচার সহজাত অধিকার রয়েছে৷ তাই এই অধিকারকে আইন দ্বারা সংরক্ষণ করতে পারে৷ কাউকেই এই অধিকার থেকে খামখেয়ালীভাবে বঞ্চিত করা যাবে না৷
২. যে সকল দেশে মৃতু্য দন্ডাদেশ রহিত করা হয়নি সেখানে উক্ত দন্ডাদেশ আরোপ করা যাবে শুধুমাত্র কঠিন অপরাধের ক্ষেত্রে এবং তা হবে অপরাধ করা সময়কালের সেই দেশের বলবত্ আইন অনুসারে৷ উক্ত দন্ডাদেশ আলোচ্য চুক্তির শর্তে এবং জেনোসাইডের প্রতিরোধ এবং চুক্তির পরিপন্থী হতে পারবে না৷
৩. জীবনের বঞ্চনা যখন জেনোসাইডের অপরাধ সংগঠিত করায়, তখন বুঝতে হবে এই ধারার কোন কিছু কোন রাষ্ট্রকে ক্ষমতা দেয় না জেনোসাইডের প্রতিরোধ এবং শান্তি চুক্তির বিরুদ্ধে ক্ষতিকারক কিছু গ্রহণ করতে৷
৪. মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তির অধিকার রয়েছে দন্ডাদেশ থেকে ক্ষমা অথবা লঘু দন্ডাদেশ সকল ক্ষেত্রেই অনুমোদন করা যেতে পারে৷
৫. ১৮ বছরের নিচের বয়সী ব্যক্তি কর্তৃক সংগঠিত অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যু দন্ডাদেশ দেয়া যাবে না এবং গর্ভবতী মেয়েদের প্রতিও মৃত্যু দন্ডাদেশ দেয়া যাবে না এবং গর্ভবতী মেয়েদের প্রতিও মৃত্যু দন্ডাদেশ কার্যকরী করা যাবে না৷
৬. আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী কোন রাষ্ট্রকে এই ধারার কোন কিছুই মৃতু¨দন্ডাদেশ রহিত করতে বাধা বা বিলম্বের সৃষ্টি করবে না৷
অনুচ্ছেদ - ৭
কেউ পীড়ন, নির্মম, আমানবিক অথবা অপমানজনক আচরণ কিংবা শাস্তির শিকার হবে না৷ বিশেষ করে, কারও মুক্ত মতামত ছাড়া তার ওপর স্বাস্থ্যগত অথবা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো যাবে না৷
অনুচ্ছেদ - ৮
১. কাউকে দাস বানানো যাবে না৷ বিভিন্ন ধরনের দাস প্রথা এবং দাস ব্যবসা নিষিদ্দ ঘোষণা করতে হবে৷
২. কৃতদাসত্বে কাউকে রাখা যাবে না৷
৩. (ক) বাধ্যতামূলক অথবা চাপিয়ে দেয়া শ্রম কাউকে দিয়ে সম্পাদন করা যাবে না;
(খ) যথাযথ আদালত কর্তৃক অপরাধের জন্য শাস্তি স্বরুপ কঠিন শ্রম অথবা যে সকল দেশে অপরাধের জন্য কঠিন শ্রমের দন্ডাদেশ দেয়া হয়, অনুচ্ছেদ ৩ (ক) ঐ সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না;
(গ) "চাপিয়ে দেয়া অথবা বাধ্যতামূলক শ্রম" - কথাটি নিম্নে বর্ণিত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না;
(i) সেই সকল শ্রম বা কাজ, যা অনুচ্ছেদ (খ) এ উল্লেখ নাই কিন্তু উহা স্বাভাবিকভাবেই সেই ব্যক্তির করার দরকার হয়, যাকে আদালত কর্তৃক আইনানুগভাবে আটক থেকে মুক্তি পাবার জন্য শর্ত মোতাবেক করতে হয়;
(ii) সামরিক ধরনের কোন কাজ অথবা দেশের আইনের প্রয়োজনে যে কোন জাতীয় কাজ;
(iii) জরুরী অথবা দুর্যোগের সময়ে জাতির যখন হুমকির সম্মুখীন তখনকার যে কোন কাজ;
(iv) স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে যে কাজ বা শ্রম৷